ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা। ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয়

ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা। ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয়


ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার থাকে। এটা দেহের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি ঘটিয়ে হজম শক্তির ক্ষমতা বাড়াই। পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় করে, এতে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয় না। আসুন আমরা নিম্নে জেনে নেই ভাতের মাড়ের উপকারিতা,ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম, ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয় ইত্যাদি।  

ভাতের মাড়ের উপকারিতা

ভাত বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের খাবার। তবে বেশির ভাগ মানুষই ভাতের মাড় ফেলে ঝর ঝরে  ভাত খেতে পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু আপনি কি জানেন ভাতের মাড় স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু উপকারী। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করলে রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীর সবসময় ঠান্ডা ও সতেজ থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।আমরা প্রতি দিনে একবার হলেও চেষ্টা করবো ভাতের মাড় খাওয়ার জন্য। তাহলে আমাদের শরীর ও মন দুইটাই সুস্থ ও সবল থাকবে।

ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম

যদি পেট খারাপ করে থাকে তাহলে এক গ্লাস ভাতের মাড়ের সাথে অল্প পরিমাণে লবণ মিশিয়ে খেলে শরীরের উপকারী খনিজের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ভাত থেকে এই ভাতের মাড়টি ছেকে নেওয়ার পরে হালকা গরম থাকতে থাকতে এক গ্লাস মাড় নিয়ে ওর ভিতর অল্প কিছু পরিমাণে লবণ দিয়ে খেয়ে নিতে হবে। এতে আমাদের শরীরের অনেক উপকার দেখা দিবে। গলার ব্যথা যদি থাকে সেটাও এটা প্রতিনিয়ত খাওয়ার পরে ভালো হয়ে যাবে।

ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা

ভাত ও মাড় দিয়েও করা যায় রূপচর্চা। সব ধরনের ত্বকেই  মানিয়ে যায় এটি। এক সময়ের রূপচর্চার জন্য ব্যবহার করা হতো হাতের তৈরি প্রাকৃতিক উপাদান। এশিয়ার নারীদের রূপচর্চার হাতে তৈরি প্রাকৃতিক উপাদান বলতে ছিল চাল। ভাতের মাড় এমন এক ধরনের উপাদান যা ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে থাকে । আর সেগুলা হল চাল ধোয়া পানি ভাত ও ভাতের মাড়।ভাতের মাড়  মুখে ব্যবহার করলে এতে নিজের ত্বক টানটান থাকে, তাছাড়া ত্বকের আদ্রতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ে, এবং ত্বকে সোপ সোপ দাগ, মেস্তা ও ত্বকের রুক্ষতা কমে।ভাতের মাড় থেকে ত্বকের জন্য এই সমস্ত উপকারিতা আমরা পেয়ে থাকি।

ভাতের মাড় কোন রোগ বালাই থেকে অবসান দেয়

আমরা জানি যে ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরে অনেক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও তাৎক্ষণিক উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।

১.শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়, এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করার একটি কার্যকারী উৎস।তাছাড়া এটা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। ভাতের মাড় শক্তি বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত উপায়।

২.কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম করে, ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এটা দেহের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পরিপাকতন্ত্রের উন্নিত ঘটিয়ে হজম শক্তির বৃদ্ধি বাড়াই।

৩.ভাইরাস, ইনফেকশন বা জ্বর হলে ভাতের মাড় খেলে শরীরে যেমন পানির ঘাটতি হবে না, তেমনি এ থেকে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে থাকবে।

৪.ভাতের মাড় উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন রোগীদের শরীরে সোডিয়াম কম থাকায় ভাতের মাড়কে অন্যতম সেরা খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৫.শিশু হোক বা বৃদ্ধ ডায়রিয়ার মত সমস্যায় ভাতের মাড় অথবা ফ্যান উভয়ের জন্যই খুবই উপকারী। ডায়রিয়ার সমস্যার শুরুতেই যদি এই ভাতের মাড় খাওয়া যায় তাহলে এই ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৬.শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে ডিহাইড্রেশন হয়।বিশেষ করে গরমে এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। ভাতের মাড় শরীরের জলের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ভাতের মাড় প্রতিনিয়ত খেলে এই সমস্ত রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক

ভাতের মাড় যেমন উপকারী তেমনি এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে চলুন এর ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা জেনে নেই।এটি ভরা পেটে খেলেও ভাত খাওয়ার পর প্রায়ই ক্ষুধার্ত বোধ হয় এবং এটি অতিরিক্ত খাওয়ার দিকে পরিচালিত করে ভাতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ থাকে এজন্য এটি যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণ খান তাহলে আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা তৈরি করে। কারণ ভাত ও ভাতের মাড় শরীরে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আর যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি লক্ষণ এতে চিনির পরিমাণটি বেড়ে ডাইবেটিসের আশঙ্কা  বাড়িয়ে দেয় ।

ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম

ধবধবে ও পরিষ্কার ত্বক পেতে প্রসাধনী নয়। বরং ঘরোয়া ওপায়ে তৈরি করুন ক্লিনজার, এতে ফিরবে ত্বকের হারানো জেল্লা। এবং ফিরে আসবে ত্বকের উজ্জ্বলতা।প্রথমত ভাতের মার ঠান্ডা করে রেখে  মুখে লাগিয়ে দিতে  হবে। এটি পোরা মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। এটি ঘড়ির কাটার মত করে গালের দুপাশে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঘষে নিন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া আপনারা ভাতের মাড়ের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এভাবে প্রতিনিয়ত ভাতের মাড় মুখে মাখলে মুখের উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা

গর্ভবতী মহিলাদের নিজের খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বারবার ভাত খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভাবস্থার সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। চলেন আমরা জেনে নেই গর্ভাবস্থায় ভাত ও ভাতের মাড়ের উপকারিতা।ভাত ও ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে যা শরীরের শক্তির এক অন্যতম উৎস। ভাত  ও ভাতের মাড় খেলে গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে শক্তি প্রদান করবে। চালের স্টার্চের পরিস্থিতি উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলির বিকাশ কে সহজতর করে। যা গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ও মসৃণ অন্ত্রের গতিতে সাহায্য করে। এটি খাবার কে আরো ভালোভাবে হজমে সাহায্য করে।রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে সোডিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে ও অন্যান্য খাদ্য থেকে সোডিয়াম গ্রহনে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় ভাত ও ভাতের মাড় থেকে সমস্ত উপকারিতা পেয়ে থাকি।

ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়

ভাত রান্না করার পরে যে মাড় বের হয় সেই মাড় খেলেও কিন্তু আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ভাত ছাকার পর মাড় টুকু আলাদা সংরক্ষণ করে অল্প লবণ দিয়ে গুলে পান করতে পারেন। ভাতের মাড়ে প্রচুর ভিটামিন থাকে যে কারণে এটা শরীরকে মোটা করতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়া ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে নিয়মিত খেলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। সবদিক হিসাব করে দেখা গেছে যে ভাতের মাড় শরীরের পক্ষে অনেক উপকারী একটি খাবার আবার এটা খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ও শরীর মোটা করতে সাহায্য করে।

শেষ কথা, উপরে লিখিত ভাতের মাড়ের উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্বন্ধে যে সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে এবং এর উপকারিতা সম্বন্ধে যেগুলো বলা হয়েছে সেগুলাই সবকিছুই সঠিক ও নিরাপদ। তারপরেও যদি আপনাদের কোন কিছু বুঝতে ও জানতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে এসে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। ধন্যবাদ। 


পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।

comment url