ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ কত?
আপনি ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ কত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই! সারাবিশ্বে বর্তমানে ব্রেস্ট টিউমার থেকে ক্যান্সারের মতো মরণব্যধি রোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে নারীরা। বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যান্সার খুব জটিল আকারে দেখা দিচ্ছে নারীদের মাঝে। তাই এটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই ব্রেস্ট ক্যান্সার, টিউমারের পরিণত রূপ। তাই প্রাথমিক অবস্থায়ই যদি টিউমার চিকিৎসার করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি উত্তোরণ সম্ভব।
একটি রিপোর্টে জানা গেছে, প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রায় ২৬৪,০০০ স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মহিলাদের মধ্যে এবং প্রায় ২৪০০টি পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪২,০০০ জন মহিলা এবং ৫০০ জন পুরুষ প্রতি বছর স্তন ক্যান্সারে মারা যায়। আরেকটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী ১২.৯% নারী তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন।
বাংলাদেশেও স্তন টিউমারের ভয়াবহতা অনেক বেশি। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে যে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের হার প্রতি এক লাখ নারীতে ২৬.৪% থেকে বেড়ে ৩০.১% হয়েছে। তাই এই ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসা সম্পর্কে জানা প্রতিটি নারীর জন্য জরুরি। তাই আপনাদের সাথে আমি আজ শেয়ার করবো ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ কত, এর লক্ষণ, অপারেশন পরবর্তী করণীয় ও আরো বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়।
ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ
ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ কত তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কিন্তু খরচ বেশি না। কারণ এই ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ সরকারিভাবেই অনেকটা বহন করা হয়ে থাকে ওষুধ থেকে শুরু করে। কিন্তু আপনি কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন তার বেড ভাড়া ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ এতে যুক্ত থাকবে।
ব্রেস্ট টিউমার এর লক্ষণ
ডাক্তাররা জানেন যে স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করলে স্তন ক্যান্সার হয়। এই কোষগুলি সুস্থ কোষগুলির তুলনায় আরও দ্রুত বিভক্ত হয়, বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরিশেষে একটি পিণ্ড বা ভারী অংশ তৈরি করে। কোষগুলি আপনার স্তনের মাধ্যমে আপনার লিম্ফ নোড বা আপনার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ( একে মেটাস্টেসাইজ বলে)।
ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ কত? বিভিন্ন মানুষের স্তন ক্যান্সারে বিভিন্ন ঘরেণের উপসর্গ দেখা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে।
স্তন টিউমারের কিছু লক্ষণ হলো:
স্তন ফুলে যাওয়া বা ভারী হওয়া।
স্তনের ত্বকের ডিম্পলিং।
নিপল ক্রাস্ট।
স্তনের ত্বকের উপরে লালভাব হওয়া।
স্তন থেকে সাদা সাদা স্রাব বের হওয়া।
ত্বকের ঘা।
বাম্পস।
নিচে নেমে যাওয়া স্তনবৃন্ত।
স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
স্তনে শক্ত পিণ্ড।
স্তন ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
স্তনের ত্বকের পরিবর্তন: আঁশ বা ফ্ল্যাকি ত্বক।
স্তনের যেকোনো স্থানে ব্যথা।
স্তনবৃন্তে বা নিপলে ব্যথা।
আন্ডারআর্ম এরিয়ায় বা বগলে সমস্যা দেখা দেয়া।
ব্রেস্ট টিউমার হলে করনীয়
স্তন ক্যান্সার বিভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়। এটা নির্ভর করে স্তন ক্যান্সারের ধরন এবং কতদূর ছড়িয়েছে তার উপর। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে প্রায়ঃশই একাধিক ধরণের চিকিৎসা করাতে হতে পারে। তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে:
সার্জারি
একটি অপারেশন যেখানে ডাক্তাররা ক্যান্সারের বা টিউমারের টিস্যু কেটে আলাদা করে ফেলেন সুস্থ কোষ থেকে।
কেমোথেরাপি
এই ক্ষেত্রে টিউমার বা ক্যান্সার কোষ সঙ্কুচিত বা মেরে ফেলার জন্য বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ওষুধগুলি হতে পারে আপনার খাবারের বড়ি বা ইনজেকশন, অথবা কখনও কখনও উভয়ই ধরণেরই হতে পারে।
হরমোনাল থেরাপি
এক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষগুলিকে তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনগুলি পেতে বাধা দেয়া হয় হরমোনাল থেরাপির মাধ্যমে।
জৈবিক থেরাপি
ক্যান্সার কোষের সাথে লড়াই করতে বা অন্যান্য ক্যান্সার চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য আপনার শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে কাজ করে এই জৈবিক থেরপি যা মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং ক্যান্সার কোষ বাড়তে পারে না।
এক্স-রে থেরাপি
ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলার জন্য উচ্চ-শক্তি রশ্মি (এক্স-রে অনুরূপ) ব্যবহার করা হয়।
উল্লেখ্য: বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আপনার স্তনের সমস্যার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করে থাকেন। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও মধ্যেও অনেক ধরণ আছেন তন্মধ্যে:
সার্জন হলেন একজন ডাক্তার যারা অপারেশন করেন
মেডিকেল অনকোলজিস্টরা হলেন ডাক্তার যারা ওষুধ দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করেন।
রেডিয়েশন অনকোলজিস্টরা হলেন ডাক্তার যারা রেডিয়েশন দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করেন।
ব্রেস্ট টিউমারের ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে যদি আপনি ব্রেস্ট টিউমার নির্ণয় করতে পারেন তাহলে তা ক্যান্সারের দিকে যাবে না। যাদের টিউমার নেই তারাও প্রতিরোধের জন্য এই হোম রেমেডিগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আদা
জিঞ্জিবার অফিসিনেল, আদার একটি উপাদান, যা স্তনে পিণ্ড তৈরিতে বাঁধা দেয়। আদার মধ্যে ব্যাকটেরিয়ারোধী এবং প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা স্তনের পিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত উপসর্গগুলি উপশম করতে সাহায্য করে।
রসুন
রসুন শত শত বছর ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে- রসুনের তেলে উপস্থিত অ্যাজোইন এবং সেলেনিয়াম উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত বা ক্যান্সার কোষের উৎপাদনে বিলম্ব করে। রসুন বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে, যেমন আপনার সালাদে কয়েকটা কাটা রসুন রাখা, রসুনের টোস্ট তৈরি করা, অন্যান্য সবজির সাথে মিশ্রিত রসুনের স্যুপ তৈরি করা ইত্যাদি।
হলুদ
কারকিউমিন হল হলুদের সক্রিয় উপাদান যা খাবারকে গাঢ় হলুদ রঙ দেয় এবং এটি মানুষের মধ্যে টিউমার বিরোধী কার্যকলাপ এবং প্রদাহ বিরোধী ক্রিয়া হিসাবে বেশ পরিচিত। কারকিউমিন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয় যা একটি পিণ্ড তৈরি করে।
ক্যারোটিনয়েড (গাজর, শাক, ইত্যাদি)
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যারোটিনয়েড খাওয়ার সাথে টিউমার কোষের কম সংখ্যাবৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে এবং টিউমারের বিকাশ হ্রাস পায়। ক্যারোটিনয়েডগুলি খুব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং শরীরে অনাক্রম্যতার কার্যকলাপ বাড়ায়।
শণ বীজ
যেহেতু শণের বীজে ওমেগা -3 থাকে এবং পাশাপাশি অন্যান্য বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা বিদ্যমান রয়েছে এতে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন 25 গ্রাম শণের বীজ খেলে স্তনে পিণ্ডের বৃদ্ধি কমে যায়।
ব্রেস্ট টিউমার হলে কি করা উচিত
আপনি যদি উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো আপনার স্তনে দেখতে পান তাহলে দেরি না করে আপনার তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ডাক্তার আপনার প্রথমেই প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করে আরো কিছু টেস্ট দিবেন নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে আসলেই আপনার ব্রেস্টে কি সমস্যা দেখা দিয়েছে। যদি টিউমার হয়ে থাকে বা তা ক্যান্সারের দিকে যায় তাহলে ডাক্তার সার্জারি করার মাধ্যমে তা অপসারণ করবেন।
ব্রেস্ট টিউমার বিশেষজ্ঞ ঢাকা
বাংলাদেশের সেরা ব্রেস্টা সার্জন বিশেষজ্ঞ পাবেন আপনি ঢাকাতে। খ্যাতিনামা সকল ডাক্তার রয়েছেন ঢাকায় যারা তাদের কাজের সফলতা ও বিশেষজ্ঞতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছেন বাংলাদেশে। এই তালিকা থেকে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সেরা সার্জনকে বাছাই করতে পারেন।
ব্রেস্ট টিউমার কেন হয়
ব্রেস্ট টিউমার তারপর ব্রেস্ট ক্যাান্সার আসলে কেন হয়? কি কি কারণে বা জীবণাচারণ থাকলে এই ঝুঁকিতে পড়তে পারেন একজন মানুষ তা জানা উচিত আমাদের। যেই কারণে সাধারণত আপনি ব্রেস্ট টিউমারের মতো রোগের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
বয়স বৃদ্ধি।
পারিবারিক টিউমারের ইতিহাস থাকা।
BRCA2, BRCA1 (আশকেনাজি ইহুদি ঐতিহ্যের সাথে বেশি সম্পর্কিত) এবং CHEK2 জিনে মিউটেশনের উত্তরাধিকার থাকা।
মহিলা হরমোনের এক্সপোজার (প্রাকৃতিক এবং পরিচালিত)।
১২ বছর বয়সের আগে আপনার মাসিক শুরু হওয়া।
পূর্ববর্তী স্তন ক্যান্সার নির্ণয়।
কিছু অ-ক্যান্সারজনিত স্তন রোগের অতীত ইতিহাস।
লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর যা পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়িয়ে তুলতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
পর্যাপ্ত শারীরিক কাজকর্ম না করা।
মদ্যপান করা।
কিছু সাধারণ স্তন রোগ।
ব্রেস্ট টিউমার মানেই কি ক্যান্সার
না, ব্রেস্ট টিউমার মানেই ব্রেস্ট ক্যাান্সার নয়। ব্রেস্ট ক্যান্সার কখন ও কোন অবস্থায় হয় তা আগে জানা উচিত আপনার যে টিউমার হওয়াই ব্রেস্ট ক্যাান্সার নয়।
স্তন ক্যান্সারের কারণ কী তা সঠিকভাবে জানা যায়নি, তবেে এই রোগের ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
নারী হওয়া।
BRCA1 এবং BRCA2 সহ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিন এবং অন্যান্য জিনগত কারণ।
পারিবারিক ইতিহাস বা স্তন ক্যান্সারের ব্যক্তিগত ইতিহাস থাকা।
অতিরিক্ত ওজন/স্থূলতা।
অ্যালকোহল ব্যবহার।
শারীরিক অক্ষমতা।
হরমোনের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবহার।
৩০ বছর বয়সের পরে প্রথম সন্তান হওয়া বা সন্তান না হওয়া।
মেনোপজের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি), বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন (সম্মিলিত হরমোন থেরাপি)।
জাতিগতভাবেও স্তন ক্যাান্সার হতে পারে। শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের তাদের জীবদ্দশায় স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি, তবে আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলাদের ৪৫ বছরের কম বয়সী স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
কিছু সাধারণ স্তন রোগ
ঋতুস্রাবের প্রারম্ভিক সূচনা (১২ বছর বয়সের আগে) হওয়া।
৫৫ বছর বয়সের পরে মেনোপজ।
উপরে যে কারণগুলো স্তন ক্যান্সার হওয়ার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে তা টিউমারের সাথে সম্পর্কিত কিন্ত তার মানে এই না যে আপনার টিউমার হলেই তা ক্যান্সারের দিকে ধাবিত হবে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তাদের জন্য রয়েছে যাদের পারিবারিক হিস্টিরিতে আগে থেকেই ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে।
সমাপ্তি
ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ আপনার সীমার মধ্যেই আছে তাই খরচের চিন্তা করে যদি আপনি সমস্যা মনে করেন তাহলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্তন ক্যাান্সারের প্রথম ধাপ হলো ব্রেস্ট টিউমার বা স্তনে টিউমার। আপনি যদি প্রথম অবস্থাতেই এই সমস্যাটি নির্ণয় করতে পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ও সম্পূর্ণরূপে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ নিয়ে আরো কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানান।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।
comment url