বাতের ব্যথার ঔষধের নাম কি?

 

বাতের ব্যথার ঔষধের নাম কি?

বাতের ব্যথার ওষুধের নাম কি- শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও যন্ত্রণাদায়ক অসুখ বাত রোগ। 

বাত একটি সিস্টেমিক ডিজিজ, যেটা কি না পুরো শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বাতের ব্যথার সমস্যার কারণে মানুষ শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি মানসিক অসস্তিতে পড়েন। 


এমনকি কেউ কেউ এই রোগের কারণে শয্যাশায়ী আবার কর্মক্ষাহীন হয়ে পড়েন। তবে আপনি যদি বাতের ব্যথার ওষুধ সঠিক সময়ে সেবন করেন তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। ওষুধের পাশাপাশি এমন বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যার সাহায্যেও বাতের ব্যথার সমস্যা দূর করা সম্ভব। 


তাই যে বা যারা বাতের ব্যথার ওষুধের নাম এবং বাতের ব্যথার অসুখ থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ জানতে চান তারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কেননা বাতের ব্যথার ওষুধের নাম এবং বাত রোগ হবার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব আমাদের এই প্রবন্ধে। 


বাতের ব্যথার ওষুধের নাম কি?



বাতের ব্যথার ওষুধ সমূহের মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত এবং চিকিৎসকরা সচরাচর সাজেস্ট করে থাকেন নিম্ন বর্ণিত ঔষধ গুলোকে। যথা:

  • ডিক্লোমল ট্যাবলেট

  • ন্যাপ্রোক্সেন

  • ইন্ডোমিথাসিন

তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি বাতের ব্যথার এই ওষুধগুলো সেবন করতে পারেন। তবে ওষুধ সেবন করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই বাতের ব্যথা কি? বাতের ব্যথার লক্ষণ এবং বাতের রোগ হলে কি কি উপসর্গ দেখা দেয় এবং প্রাথমিকভাবে কি কি করণীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। তাহলে আসুন ধারাবাহিকভাবে এই সমস্ত বিষয় খুব অল্প আলোচনার মাধ্যমে অবগত হওয়া যাক।


বাতের রোগ কি?


বাত রোগের অপর নাম রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, যাকে বলা হয় অটোইমিউন ব্যাধি। এটি এমন একটি রোগ যা শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মূলত অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে এ রোগের উৎপত্তি ঘটে। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সি পুরুষদের মাঝে বাতের ব্যথার সমস্যা অধিকারে দেখা দেয়। অপরদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটি রজনী:বৃত্তির পর অর্থাৎ ৪৫ বছর পরে দেখা দিয়ে থাকে। 


বাতের ব্যথার লক্ষণ


বাতের ব্যথার সমস্যা মূলত ইউরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত জমা হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। আমাদের শরীর থেকে মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ স্বাভাবিক ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায় তার থেকে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড যখন আমাদের যকৃত তৈরি করে তখনই তা রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। আবার খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড গ্রহণ করলে এবং কিডনি রক্ত থেকে যথেষ্ট পরিমাণে তা ফিল্টার করতে না পারলে বাতের ব্যথার উপসর্গ গুলো দেখা দেয়। আপনার শরীরে যদি কখনো বাতির সমস্যা হয় তাহলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাবে। সেগুলো হলো:

  • প্রদাহ

  • ব্যথা

  • অস্থিসন্ধি লাল হয়ে যাওয়া

  • অস্থিসন্ধি ফুলে যাওয়া

  • পায়ের আঙ্গুল নাড়াতে তীব্র ব্যথা অনুভব করা

  • শরীরে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হওয়া যেটা অস্বাভাবিক।

বাত রোগের সমস্যাটা মোটামুটি জটিল। এই রোগ যদি কারো শরীরে বাসা বাঁধে তাহলে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন কারণ রয়েছে যে কারণগুলোর জন্য বাদ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন:

  • ডায়াবেটিসের সমস্যা

  • শরীর মোটা হয়ে যাওয়া

  • কিডনির নানা রকম রোগ

  • রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি ইত্যাদি।

শুধু তাই নয়, কখনো কখনো কিছু কিছু ঔষধ সেবন করার কারণে এই বাতের ঝুঁকি অধিকারের বৃদ্ধি পায়। সেই ওষুধগুলো হলো:

  • লিভোডোপা

  • সাইক্লোস্পনিন

  • ডাইইউরেটিক্স

  • অ্যাসপিরিন 

তাই অবশ্যই যে কোন ওষুধ সেবন করার পূর্বে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। নয়তো বাত রোগের মত আরো ভয়াবহ অসুখের কবলে পড়তে পারেন আপনি। 


বাতের ব্যথার সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায়


আপনি যদি বাতের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সেই সাথে নিজের বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই জরুরী। কেননা অনেকের ধারণা বাতের ব্যথা শুধুমাত্র ওষুধ খাওয়ার ফলে সেরে যায়। তবে সত্যি কথা হচ্ছে আপনি যদি ঔষধ না খান তবুও বাতের ব্যথার সমস্যা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। আর এর উপায় হিসেবে বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে। যেমন:

  • বাতের ব্যথা উপশমে ব্যায়াম একই কার্যকরী ঔষধ।

  • বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ

  • বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওজন স্বাভাবিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

  • মানসিক চাপ বাতের ব্যথার সমস্যা কে বাড়িয়ে দেয়। তাই বাতের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মন ফুরফুরে রাখুন।

ইতোমধ্যে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বাত ব্যথার সাথে অবসাদ বা মানসিক ক্লান্তি আসাটা খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। তাই অবশ্যই নিজেকে এর বিরুদ্ধে প্রটেকশন দিতে হবে। বাতের ব্যথার সমস্যা থাকলে রোগের হার্ট এটাকের সম্ভাবনা অনেক অংসে বেড়ে যায়, তাই এ বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। 


অনেকেই ধারণা পোষণ করেন বাত রোগ থেকে পুরোপুরি ভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল কেননা বাতের ব্যথা থেকে ধীরে ধীরে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব, যদি প্রারম্ভিক পর্যায়ে তা শনাক্ত এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়। তাই আপনার শরীরে যদি কোন প্রকার লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে এখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তাদের দেওয়া ইনস্ট্রাকশন মেনে চলুন। 


বাতের ব্যথার ব্যায়াম 


বাতের ব্যথা দূর করতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত হালকা-পাতলা ব্যায়াম করতে হবে। কেননা হালকা ব্যায়াম আমাদের শরীরের জয়েন্ট গুলোর উন্নতি ঘটায়। তাছাড়াও এটা আমাদের সকলের জানা যে ব্যায়ামে মাধ্যমে বেশি শক্তিশালী হয়। তাই আপনি যদি দাঁতের সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে চান তাহলে বাতের ব্যথা দূরীকরণের জন্য হালকা পাতলা নিয়মিত ব্যায়াম করুন। 


বাতের ব্যথার ইনজেকশন 


দাঁতের সমস্যা থাকলে কখনো কখনো ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। কিছু কিছু চিকিৎসকের আলোচনা থেকে জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের বাত ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে ব্যাথা নাশক ঔষধ সেবন করা। পাশাপাশি ডিজিজ মডিফাইং অ্যান্টিরিউমেটিক ড্রাগ প্রয়োগ করা হয়। যেগুলো ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। তবে হ্যাঁ কখনো কখনো এই ড্রাগগুলো মুখে খাওয়াও হয়ে থাকে। একটি অটোইমিউন ডিজিজ, অর্থাৎ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কথনো কখনো আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করে। তাই শুধু ওষুধ সেবনের পাশাপাশি কিছু লাইফস্টাইল মডিফেকেশনও প্রয়োজন। বাতের ব্যথার সমস্যাটা মূলত অটোইমিউন ডিজিজ, অর্থাৎ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কথনো কখনো আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করে। তাই শুধু ওষুধ সেবনের পাশাপাশি কিছু লাইফস্টাইল মডিফেকেশনও প্রয়োজন। 

আবার কিছু কিছু বাত আছে, যেগুলো খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হয়। তাই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আশা করা যায় এতেই আপনি বাতের ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 


বাতের ব্যথার আয়ুর্বেদিক ঔষধ 


বাতের ব্যথার সমস্যা থেকে বাঁচতে চাইলে আপনি আয়ুর্বেদিক ঔষধ সেবন করতে পারেন। কেননা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বাতের ব্যথার মহোৎষধ ঔষধি গাছ আকন্দ। আর এই গাছের কান্ড, পাতা, বীজ সবকিছুই আপনি সেবন করতে পারবেন।


মূলত শরীরের যে জায়গায় আপনার বাতের ব্যথা অনুভব হয়,সেখানে আকন্দের পাতা গরম করে ছেক দিলে সেই ব্যথা নিরাময় হয়ে যায়। এর পাশাপাশি মেদ হলে, প্রসবের সমস্যা দেখা দিলে, পেটের কোন সমস্যা বা যকৃতের রোগের আবির্ভাব ঘটলে আপনি এই আকন্দ কে ওষুধ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে সেবন করতে পারবেন। 



পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, বাতের ব্যথার ওষুধের নাম কি এ সম্পর্কিত আমাদের প্রবন্ধটি আজকে এখানেই শেষ করছি। যেহেতু এই রোগ ওষুধ না খেয়েও আপনি ব্যায়াম এবং ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে নিরাময় ঘটাতে পারবেন তাই অবশ্যই লক্ষণ গুলো চিহ্নিত হওয়ার পরবর্তীতে এই নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। 



পাশাপাশি যে কোন ঔষধ সেবন করতে চাইলে প্রথমত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন বাতের ব্যথার ঔষধ। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।

comment url