টনসিল অপারেশন কিভাবে করে।টনসিল অপারেশন খরচ কত

 

টনসিল অপারেশন কিভাবে করে।টনসিল অপারেশন খরচ কত

ঠান্ডা বা ঠান্ডাজনিত কারণে যে কারো টনসিলের সমস্যা হতে পারে। টনসিল স্বাভাবিক থাকলে ঠিক আছে কারণ টনসি শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণূ প্রবেশে বাধা প্রদান করে। কিন্তু টনসিল অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে নাক-কান দিয়ে প্রবেশকৃত জীবাণুর পরিাশন বেড়ে যায়। টনসিল প্রকৃতঅর্থে শরীরে রোগ প্রতিরোধ একটি  অংশ। টনসিল যদি অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় তাহলে তা অপারেশনের মাধ্যমে সারাতে হয়। টনসিলের চিকিৎসাকে টনসিলেক্টমি বলে। টনসিলেক্টমি একটি অস্ত্রোপচার চিকিৎসা যা টনসিল অপসারণ করে। 



টনসিল অপারেশন ততটা ব্যয়বহু না সরকারি হাসপাতাল থেকে টনসিলের চিকিৎসার করাতে পারবেন। কিন্তু প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ বেশি হবে কিছুটা। চলুন আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে জেনে নেই টনসিল অপারেশন খরচ কত



টনসিল কি



টনসিল হল ছোট গ্রন্থি যা গলার দুই পাশে অবস্থান করে ও রোগ জীবাণুর প্রকোপ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। টনসিল গলা এবং উপরের শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, কিন্তু অনেক সময় টনসিল বড় বা সংক্রমিত হতে পারে, যার ফলে টনসিলাইটিস নামক অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংক্রামিত টনসিল দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের পুনরাবৃত্তি এবং অন্যান্য উপসর্গগুলি হ্রাস করা বা দূর করা।



টনসিল অপারেশন বা টনসিলেক্টমির ধরণ



টনসিল একটি ঠান্ডাজনিত রোগ। এই রোগটি অপসারণ বা চিকিৎসার জন্য সাধারণত চারটি প্রকারে বা ৪ ধরণে করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে:


কোল্ড নাইফ টনসিলেক্টমি: এটি টনসিলেকটমির সবচেয়ে সাধারণ প্রকার এবং এতে টনসিল অপসারণের জন্য স্ক্যাল্পেল বা অন্যান্য ধারালো যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।


কোব্লেশন (রেডিওফ্রিকোয়েন্সি) টনসিলেক্টমি: এই পদ্ধতিটি স্ক্যাল্পেলের পরিবর্তে টনসিল অপসারণ করতে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি শক্তি ব্যবহার করা হয়।


লেজার টনসিলেক্টমি: এই পদ্ধতিটি স্ক্যাল্পেলের পরিবর্তে টনসিল অপসারণ করতে লেজার শক্তি ব্যবহার করা হয়।


মাইক্রোডিব্রাইডার টনসিলেক্টমি: এই পদ্ধতিটি স্ক্যাল্পেলের পরিবর্তে টনসিল অপসারণের জন্য একটি মাইক্রোডিব্রাইডার নামক একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।




টনসিল অপারেশনের পূর্বে যা করবেন



টনসিল অপারেশনের পূর্বে কিছু ধারাবাহিক নিয়মের মধ্যে দিয়ে আপনাকে যেতে হবে। যাতে করে আপনি সহজেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন যে, আপনার কি অপারেশন আসলেই জরুরি নাকি চিকিৎসকরে পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি সুস্থ হতে পারবেন অপারেশন ছাড়াই।


আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন

আপনার ডাক্তারের সাথে অস্ত্রোপচারের সমস্ত ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করে  নিশ্চিত করুন এবং চিকিৎসা চলাকালীন কি হতে পারে তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।


সমস্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান

আপনার স্বাস্থ্যের ইতিহাস এবং বয়সের উপর নির্ভর করে, আপনাকে অস্ত্রোপচারের আগে রক্ত ​​​​পরীক্ষা বা অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা পূর্ব থেকেই করে নিন।


অস্ত্রোপচারের আগে নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন

আপনার ডাক্তার সম্ভবত অপারেশনের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সে সম্পর্কে আপনাকে বিশেষ পরামর্শ দেবেন, যেমন  অপারেশনের আগে খালি পেটে থাকা বা  অপারেশনের আগে কিছু ওষুধ বন্ধ করা। তাই সচেতনভাবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করুন।



অপারেশন পরবর্তী প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি রাখুন

আপনি নরম খাবার, গলার লোজেঞ্জ এবং ব্যথার ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি আগে থেকেই তৈরি রাখুন যাতে রিকভারির সময়ে প্রয়োজনে আপনার টনসিলেক্টমি করার পরে আপনার কাছে সেগুলি পাওয়া যায়।



টনসিল অপারেশন খরচ কত



টনসিল বড় হয়ে গেলে তা অপারেশন করতে হয়। কিন্তু তার মানে এই না যে, আপনাকে টনসিল অপারেশন করতেই হবে। সাধারণত বেশিরভাগ সময় টনসিল স্বাভাকিক ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করলেই সেরে যায়। 


টনসিল অপারেশন খরচ কত এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে আপনি কি ধরণের হাসপাতালে চিকিৎসা নিবেন। টনসিল অপারেশন খরচ কত এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে করলে ৩০ - ৪০ হাজার টাকা লাগবে আর যদি প্রাইভেট হাসপাতালে করেন তাহলে খরচ আরো বেশি হবে লক্ষাধিকের উপরে হতে পারে।




টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা 



টনসিলেক্টমির পর কী খাবেন, এটা নিয়ে ভাবছেন? ভাবনার কিছু নেই। অপারেশনের পর আপনার ডাক্তারই আপনাকে বলে দিবে কি খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে আর কি একদমই খেতে পারবেন না। সাধারণত অপারেশনের পরে নরম খাবার খাওয়ার নির্দেশ দেন ডাক্তার যা সহজে গিলতে পারা যায়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে:


  • পুডিং

  • স্মুদিস

  • দই

  • আইসক্রিম বা হিমায়িত দই

  • আলু ভর্তা

  • স্যুপ (যেমন ঝোল বা বিশুদ্ধ সবজি)

  • নরম রান্না করা সবজি (যেমন গাজর বা আলু)

  • রান্না করা সিরিয়াল (যেমন ওটমিয়া)

  • ডিম (সিদ্ধ নরম ডিম)



যা খাবেন না



তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য যে খাবারগুলো আপনার খাওয়া উচিত তা তো অবশ্যই ঐভাবেই খাবেন কিন্তু কিছু বিশেষ খাবার আপনাকে আবার এড়িয়েও চলতে হবে না হলে আপনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন।


অন্তত ২ সপ্তাহের জন্য, পুডিং, দই, টিনজাত বা রান্না করা ফল, স্ক্র্যাম্বল করা ডিম এবং ম্যাশড আলু জাতীয় নরম খাবার বেছে নিন। চিপস বা কাঁচা সবজির মতো শক্ত এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।



টনসিল অপারেশনের পর কি করনীয় 



টনসিল হলে গলায় তীব্র ব্যথাা, খাবার খেথে কষ্ট, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা বের হওয়া, কণ্টস্বর ভারি হওয়া ইত্যাদি অনেক সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা বেড়ে গেলে অপারেশন জরুরি। কিন্তু অপারেশন মেষে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য রোগীকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হবে। টনসিল অপারেশনের পর যা যা আপনার অবশ্যই করণীয়:


  • আপনার সার্জন বা হাসপাতালের কর্মীদের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যথার ওষুধ নিন।

  • ডিহাইড্রেশন এড়াতে অস্ত্রোপচারের পরে প্রচুর পরিমাণে তরল জিনিস পান করা। এর মধ্যে সাধারণ পানি সবচেয়ে ভালো।

  • ম্যাশড বা একেবারে নরম খাবার যা সহজে গিলে ফেলা যায়, যেমন নরম ভাত বা ঝোল তরাকারি, অস্ত্রোপচারের পরপরই সবচেয়ে ভালো খাবার। আইসক্রিম এবং পুডিংয়ের মতো খাবার যদি সহ্য করা যায় তবে ডায়েটে যোগ করা যেতে পারে। যেসব খাবার চিবানো এবং গিলতে সহজ হয় সেই ধরণের খাবার খাওয়া উচিত।

  • অম্লীয়, মশলাদার, শক্ত বা মুচমুচে খাবার এড়িয়ে চলুন যা ব্যথা বা রক্তপাতের কারণ হতে পারে।

  • অস্ত্রোপচারের পর বেশ কয়েক দিন বিছানায় বিশ্রাম নিন এবং অস্ত্রোপচারের পর ২ সপ্তাহের জন্য কঠিন কাজ থেকে বিরত নিন যেমন: দৌড়ানো এবং বাইক চালানো - এড়ানো উচিত। 



টনসিল অপারেশনের পর সমস্যা 



টনসিল অপারেশনের পর কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যা হওয়া খুব স্বাভাবিক ধরা হয়। সময়ের সাথে সাথে তা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকবে। টনসিলেক্টমির পরে সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি সমস্যাগুলি রয়েছে: 


  • এক থেকে দুই সপ্তাহ ধরে গলায় মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা।

  • কানে, ঘাড়ে বা চোয়ালে ব্যথা।

  • কয়েকদিন ধরে বমি বমি ভাব ও বমি।

  • কয়েকদিন ধরে হালকা জ্বর।

  • দুই সপ্তাহ পর্যন্ত নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ।

  • জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া।

  • গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি।

  • শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ বা ঘুমের ব্যাঘাত।



টনসিল অপারেশনের পর ঝুঁকি



যদিও টনসিল অপারেশনের পর জটিলতা দেখা দেয়া বেশ বিরল তবুও অনেকের ক্ষেত্রে (খুবই কম) তা হতে পারে। কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে টনসিল অপারেশেনের তা নিম্নোক্ত:


  • সংক্রমণ।

  • অতিরিক্ত রক্তপাত (টনসিলেক্টমির সময় বা পরে)।

  • আপনার জিহ্বা বা আপনার মুখের উপরের তালু ফুলে যাওয়া।

  • এনেস্থেশিয়ার প্রতিক্রিয়া।

  • অস্ত্রোপচারের পরে রক্তপাত।



টনসিল অপারেশন কিভাবে করে



টনসিল অপারেশন ধারাবাহিক কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। একজন সার্জন এই অপারেশন করে থাকেন। এর জন্য তিনি প্রথমে রোগীকে..


অজ্ঞান করার জন্য সাধারণ অ্যানেশেসিয়া দেন। এর পরে, তারা আপনার টনসিলগুলি অপসারণ করেন। এই ধাপে আপনি কোন ব্যথা অনুভব করবেন না। শল্যচিকিৎসকরা টনসিলেক্টমি করার জন্য অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যার মধ্যে রয়েছে:


ইলেক্ট্রোকাউটারি: এই পদ্ধতিটি টনসিল অপসারণ করতে এবং রক্তপাত বন্ধ করতে তাপ ব্যবহার করে।


ঠান্ডা ছুরি (স্টিল) ব্যবচ্ছেদ: একজন সার্জন আপনার টনসিল অপসারণের জন্য একটি স্ক্যাল্পেল (প্রথাগত অস্ত্রোপচারের ছুরি) ব্যবহার করেন। তারপর, তারা ইলেক্ট্রোকাউটারি (অত্যন্ত তাপ) বা সেলাই দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করেন।


স্নেয়ার টনসিলেক্টমি: একজন সার্জন ট্রেপ নামক একটি বিশেষ অস্ত্রোপচারের যন্ত্র ব্যবহার করেন, যার শেষে একটি পাতলা তারের লুপ থাকে। একবার সার্জন আপনার টনসিল মুক্ত করে দিলে, তারা এই ডিভাইসটিকে এটির চারপাশে রাখবেন যাতে এটি বন্ধ করা যায়। এটি রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে।


হারমোনিক স্ক্যাল্পেল: এই পদ্ধতিটি আপনার টনসিল অপসারণ করতে এবং একই সময়ে রক্তপাত বন্ধ করতে অতিস্বনক কম্পন ব্যবহার করে।


অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন কৌশল, কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার এবং/অথবা একটি মাইক্রোডিব্রিডার ইত্যাদি যা টনসিল অপারেশনে ব্যবহৃত পদ্ধতি।


উল্লেখ্য: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, একটি টনসিলেক্টমি অপারেশন শেষ হতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি সময় নিতে পারে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে।



টনসিলেক্টমির সুবিধা কী কী?



টনসিল একটি গলার সমস্যা। চিকিৎসা করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই অবশ্যই এর কিছু সুবিধা থাকবে। একটি টনসিলেক্টমি অপারেশন করার অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে আছে:


  • ভালো ঘুম হয়।

  • সংক্রমণের পরিমাণ কমে যায়।

  • সুস্থ জীবন পাওয়া।



টনসিল অপারেশন খরচ কত নিয়ে শেষ কথা



টনসিল অপারেশন খরচ কত তা তো আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জানলাম পাশাপাশি এর অপারেশন কিভাবে করা হয়, কত সময় লাগতে পারে এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে বিস্তারিত সবকিছু্। এরপরেও যদি আপনাদের এই পোস্ট সম্পর্কিত কিছু জানার থাকে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।


পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।

comment url