পাইলস অপারেশন খরচ কত।পাইলস অপারেশনের পর করণীয়

 

পাইলস অপারেশন খরচ কত

অনিয়মিত খাদ্যাভাস ও জীবানাচারণ অনেক সময় আপনাকে পাইলসের মতো সমস্যায় ফেলতে পারে। পাইলস একটি জটিল রোগ না হলেও তা অবহেলা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার অভাবে জটিল রোগে পরিণত হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে আপনাকে অবশ্যই পাইলসের চিকিৎসা করাতে হবে। 


পাইলস অপারেশন খরচ কত তাই এই প্রশ্ন অনেকের থাকে। কিন্তু আপনার জানা থাকা দরকার যে, পাইলস হলেই আপনাকে অপারেশনের মাধ্যমেই তা সারতে হবে এমন না। সাধারণত ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পাইলস রোগী অপারেশন ছাড়াই সুস্থ হতে পারেন যদি কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন। কিভাবে আপনি পাইলস অপারেশন খরচ বাদে এর চিকিৎসা করতে পারবেন এবং জটিল অবস্থা হলে পাইলস অপারেশন খরচ কত পড়তে পারে তা নিয়েই থাকছে আজকের এই পোস্ট।



পাইলস কি?



হেমোরয়েডস (এইচইএম-উহ-রয়েডস), যাকে পাইলসও বলা হয়, আপনার মলদ্বার এবং নীচের মলদ্বারের ফুলে যাওয়া শিরা, ভ্যারিকোজ শিরাগুলির অন্তর্ভূক্ত থাকে। অর্শ্বরোগ বা পাইলস মলদ্বারের অভ্যন্তরে (অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগ) বা মলদ্বারের চারপাশে ত্বকের নিচে (বাহ্যিক অর্শ্বরোগ) বিকাশ করতে পারে। চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে প্রায় তিনজনের অর্শ্বরোগ বা পাইলস হতে পারে।



পাইলস কেন হয়?



পাইলস হল আপনার মলদ্বারের ফুলে যাওয়া রক্তনালী। কিছু স্পষ্ট কারণ রয়েছে পাইলস হওয়ার। যে জিনিসগুলি পাইলস হওয়ার সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে তোলে:


  • কোষ্ঠকাঠিন্য।

  • পায়খানা করার সময় খুব কষ্ট হওয়া।

  • বেশি ভারী জিনিস উত্তোলনের অভ্যাস।

  • গর্ভাবস্থায়।



পাইলসের লক্ষণ



  • আপনার মলত্যাগের পর লাল রক্ত বের হওয়া।

  • মলদ্বারে চুলকানি হওয়া।

  • মলত্যাগের পরেও মলত্যাগ করার অনুভূতি হওয়া।

  • আপনার মলদ্বারের চারপাশে সমস্যা।

  • মলদ্বার বাইরে বের হয়ে ঝুলে যাওয়া।

  • মলদ্বার হাত দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।

  • আপনার মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা হওয়া।



পাইলস প্রতিরোধে করণীয়



পাইলস অপারেশন খরচ কত জানার পাশাপাশি এর প্রতিরোধে করণীয়ও আপনাকে জানতে হবে। পাইলস হওয়ার পর চিকিৎসা করানোর চেয়ে প্রথমেই যদি আপনি এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেন তাহলে আপনি এই সমস্যা থেকে শুরুতেই পরিত্রাণ পাবেন। 


  • আপনার পায়খানা নরম রাখতে প্রচুর তরল পান করুন এবং প্রচুর ফাইবারযুক্ত খাবার খান।

  • পায়খানা শেষে ভালোভাবে মলদ্বার পরিষ্কার করুন এবং টিস্যু পেপার দিয়ে তা পরিষ্কার রাখুন। 

  • পাইলসে ব্যাথা হলে প্যারাসিটামল খান।

  • চুলকানি এবং ব্যথা কমাতে একটি গরম পানি একটি বোলে নিয়ে তাতে বসে থাকুন কিছুক্ষণ।

  • সব সময় আপনার মলদ্বার পরিষ্কার-িপরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখুন।

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।



যা করবেন না



  • কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন (যেমন চা, কফি এবং কোলা) কমিয়ে দিন

  • মলত্যাগ করার পরে মলদ্বার বেশি জোরে জোরে পরিষ্কার করবেন না।

  • মলত্যাগের তাগিদ উপেক্ষা করবেন না।

  • মলত্যাগ করার সময় খুব বেশি চাপ দেবেন না।

  • ব্যথানাশক ঔষধ খাবেন না যাতে কোডিন থাকে, কারণ এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

  • আপনার পাইলস থেকে রক্তপাত হলে আইবুপ্রোফেন গ্রহণ করবেন না।

  • টয়লেটে আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় থাকবেন না।




পাইলস অপারেশন খরচ কত টাকা লাগে



যেমনটা আমি উপরে বলেছি ৯৫ ভাগ পাইলস রোগীর পাইলস দূর করা সম্ভব অপারেশন ছাড়াই প্রাথমিক অবস্থায় যদি এর চিকিৎসার শুরু করা যায়। তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে পাইলসের ধরণের উপর। পাইলস বিভিন্ন রকম হতে পারে কতগুলো পাইলস ইন্টারনাল বা ভিতরের দিকে হয়ে থাকে আর কতগুলো বাইরের দিকে অর্থাৎ এক্সটার্নাল যাকে এক্সটার্নাল হেমরয়েডও বলা হয়ে থাকে। যদি এক্সটার্নাল পাইলস হয় তাহলে তা কেটে অপারেশন করতে হয় এই পদ্ধতিকে হোমোরয়েডিটমি বা ক্লোজ হোমোরয়েটিমি বলে। আপনার পাইলসটি কোন অবস্থায় আছে এবং অপারেশন লাগবে কিনা তা চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ধারণ করবেন।



পাইলস হওয়ার সম্ভবাবনা শতকরা দুই ভাগ আর যদি হয়েও যায় প্রাথমিক অবস্থায় তা অপারেশন ছাড়াই নির্মূল সম্ভব। আর অপারেশনের প্রয়োজন হলে খরচ ৫০ হাজার টাকার (সাধারণ হাসপাতালে) মতো পড়বে কারণ যেই যন্ত্রটির মাধ্যমে অপারেশন করা হবে তার খরচ বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি আরো ভালো মানের হসপিটালে অপারেশন করাতে চান তাহলে খরচ লক্ষাধিক টাকার উপরেও লাগতে পারে অবস্থাভেদে।



পাইলস অপারেশনের পর করণীয় 



পাইলস অপারেশন হওয়ার পর আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু সময় সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে কারণ চিকিৎসার পরও পাইলস আবার হতে পারে আপনার অবহেলা ও অসাবধানতার জন্য। 


  • পাইলস অপারেশনের পর অন্তত এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিন। সাধারণত অস্ত্রোপচারের প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পরই কাজ করা যায়। সম্পূর্ণরূপে ভালো হতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

  • ক্লান্ত বোধ করলে বিশ্রাম নিন।

  • সক্রিয় থাকুন সব সময়। হাঁটা-হাঁটি একটি ভালো অভ্যাস পাইলসের পর সুস্থ থাকতে। 

  • আপনার শরীরকে নিরাময় করার সময় দিন। যতক্ষণ না আপনি সুস্থ বোধ করছেন ততক্ষণ দ্রুত নড়াচড়া করবেন না বা ভারী কিছু তুলবেন না।

  • মলদ্বারের জায়গাটি সব সময় শুষ্ক রাখুন এমনকি গোসলের পরও ভালো করে খেয়াল করবেন তা মুছা হয়েছে কিনা সঠিকভাবে।





পাইলস অপারেশনের পর খাবার

 


খাবার বড় একটি ভূমিকা রাখে পাইলস অপারেশনের পর। তাই খাবারের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ সচেতন হতে হবে। তাই অপারেশনের পর প্রচুর পরিমাণে গোটা শস্য, সবুজ শাক-সবজি এবং ফলমূল খান। কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টিকারী খাবার যেমন দুগ্ধজাত খাবার, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন: পিৎজা, হিমায়িত খাবার, পাস্তা এবং চিনি জাতীয় পণ্য যেমন: কেক,, পেস্ট্রি, ডোনাট এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।


তাজা ফল খাওয়া বেশ স্বাস্থ্যকর পাইলস অপারেশনের পর এবং পাইলস সার্জারির পরে খাওয়ার জন্য সেরা খাবার। ফলের মধ্যে আপনি যেই ফলগুলো বাছাই করতে পারেন দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য তন্মধ্যে আছে আপেল, আঙ্গুর, কলা এবং কমলা ইত্যাদি। এই খাবারগুলো আপনার হজমশক্তিকে বৃদ্ধি করে ও হজম প্রক্রিয়ায় হওয়া বাঁধা হ্রাস করে। 



যা খাবেন না



নির্দিষ্ট কিছু খাবার অপারেশনের পর গ্রহণের পাশাপাশি বর্জনীয় কিছু খাবারও আছে। যদি আপনার এই খাবার গুলোর খাওয়ার অভ্যাস থাকে এবং আপনি সম্প্রতিই পাইলস অপারেশন করিয়েছেন তাহলে এগুলো এড়িয়ে চলুন।


  • পনির

  • চিপস

  • ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার (পিৎজা, বার্গার, রোল ইত্যাদি)

  • আইসক্রিম

  • মাংস

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন: কিছু হিমায়িত এবং স্ন্যাক জাতীয় খাবার।

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন হট ডগ এবং কিছু মাইক্রোওয়েভেবল খাবার।



শেষকথা



পাইলস খুব সাধারণ একটি রোগ। যদি আপনি প্রাথমিক অবস্থায় তা জানতে পারেন তাহলে চিকিৎসা ঘরে বসেই সম্ভব। তাই আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম পাইলস অপারেশন খরচ কত ও কিভাবে এই সমস্যা থেকে প্রাথমিক অবস্থাতেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। 

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।

comment url